শুক্রবার, ২০শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উপজেলা আ.লীগের কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ, অবরোধ

আল-ফেরদৌস (রানা),ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেন নেতা-কর্মীরা। বালিয়াডাঙ্গী শহরের চৌরাস্তা, ঠাকুরগাঁও, ৩০ মে দুপুর
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেন নেতা-কর্মীরা।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সুযোগসন্ধানী-অনুপ্রবেশকারী, মাদক ব্যবসায়ী, নিরক্ষর, রাজনীতিতে অপরিচিত—এমন ব্যক্তিদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এমন অভিযোগে রোববার দুপুরে ত্যাগী ও নেতা-কর্মীর ব্যানারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, জেলা সভাপতি দবিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ওই সম্মেলনে তৃণমূলের ভোটে মোহাম্মদ আলী সভাপতি ও সফিকুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে নির্বাচিত নেতৃত্ব ঘোষণা দেন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতি মু. সাদেক কুরাইশী। মোহাম্মদ আলী ও সফিকুল ইসলাম ভাই হওয়ার অজুহাতে সম্মেলনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির পরামর্শে সেই কমিটি বাতিল করা হয়। কমিটি বাতিলের ১০ মাস পর ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আলী সভাপতি ও আবু হাসনাতকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৭ সদস্যবিশিষ্ট উপজেলার আংশিক কমিটি ঘোষণা করে জেলা আওয়ামী লীগ।

ওই আংশিক কমিটি ঘোষণার পরের দিন দলের ত্যাগী ও জ্যেষ্ঠ নেতা–কর্মীদের বাইরে রেখে বিতর্কিতদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ এনে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

এদিকে গত ২১ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে অনুমোদনের জন্য জেলা কমিটির কাছে পাঠায় ঘোষিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ২২ মে তা অনুমোদন দেয় জেলা কমিটি। ২৭ মে তা ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কমিটিতে ত্যাগী ও জ্যেষ্ঠ নেতা–কর্মীরা জায়গা না পাওয়া ও বিতর্কিতদের নাম দেখে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। সেই ক্ষোভ থেকে রোববার তাঁরা উপজেলা শহরের চৌরাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশ সম্পাদক আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি সফিকুল ইসলাম, আবদুল ওহাব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোখলেসুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান, উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান, তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক এরশাদুল হক, ভানোর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে প্রক্রিয়ায় কমিটি হওয়ার কথা, উপজেলা কমিটি সেভাবে করা হয়নি। ঘোষিত কমিটিতে স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্য, সুযোগসন্ধানী, মাদকসেবী, রাজনীতিতে অপরিচিত এমন ব্যক্তির নাম কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ সভা করে বলেছি, কাউন্সিলের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উপায়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠন করতে হবে।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সাবেক সদস্য আজাহার আলী বলেন, এই কমিটি জেলা কমিটির মনগড়া পকেট কমিটি হয়েছে। দলের ত্যাগী-পরীক্ষিত ও জ্যেষ্ঠ নেতা–কর্মীদের বাইরে রেখে বিতর্কিত, অনুপ্রবেশকারীদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। একটা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই কমিটি করা হয়েছে। কাউন্সিল ছাড়া বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে পকেট কমিটি করে ঘোষণা করে দেবে, এটা হতে পারে না।

পাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলছেন, স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্য ও অনুপ্রবেশকারীদের কমিটিতে রাখা যাবে না, আর বালিয়াডাঙ্গীতে তাঁর কথা অমান্যের পাশাপাশি সুযোগসন্ধানী-অনুপ্রবেশকারী, মাদক ব্যবসায়ী, নিরক্ষর, রাজনীতিতে অপরিচিত—এমন ব্যক্তিদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মমিনুল ইসলাম বলেন, ঘোষিত কমিটিতে সহসভাপতি পদ পেয়েছেন আবদুস সবুর মিয়া। তিনি উপজেলার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের পারুয়া গ্রামের মৃত বারেক মিয়ার ছেলে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বারেক মিয়া পিস কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন বলে অভিযোগ আছে।

কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আল মনসুর মাদক ব্যবসা ও গাছ চুরির মামলার আসামি। ঘোষিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির বিএনপি পরিবারের সদস্য। তাঁর ভাই ইসমাইল হক বড়বাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। সহসভাপতি অপূর্ব কুমার রায়, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক তালেবুর রহমান ও প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আইনবিষয়ক সম্পাদক রুহুল আমীন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মীরনাথ গোস্বামীকে দলের কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি।

সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘোষিত কমিটিতে অযোগ্য-অথর্ব, অশিক্ষিত, রাজাকার ঘরানার লোকজন এই কমিটিতে পদ দেওয়ায় ঘোষিত কমিটিতে আমার নাম থাকলেও আমি এই পদ প্রত্যাখ্যান করছি।’

ঘোষিত কমিটির সম্পাদক আবু হাসনাত বলেন, যাঁরা দলের কর্মকাণ্ডে সব সময় সম্পৃক্ত ছিলেন, যাঁরা সংগঠনের কাজে কর্মদক্ষতা দেখিয়েছেন—এসব মূল্যায়নের ভিত্তিতেই এই কমিটিতে পদায়ন করা হয়েছে। পদবঞ্চিতরা এ নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করতেই পারেন। কিন্তু রাস্তা অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করা, দাবি আদায়ের কর্মসূচি হতে পারে না, এটা সংগঠনবিরোধী কাজ।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সাংসদ মো. দবিরুল ইসলাম বলেন, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন সম্পর্কে তাঁকে কিছুই জানানো হয়নি।

এই বিভাগের আরো খবর